সোমবার, ৮ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,
২রা মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি, সকাল ১১:১৯

নতুন বছরে কোন দিকে যাবে মহামারি

করোনাভাইরাসের আঘাতে বিধ্বস্ত ছিল ২০২০ সাল। নতুন আশা নিয়ে এসেছে ২০২১। নতুন বছরে করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতি কেমন হতে পারে এবং বিদায়ি বছর আমাদের কী শিখিয়েছে, এসব বিষয় নিয়ে স্কাই নিউজকে নিজেদের মত জানিয়েছেন ভিন্ন খাতের চার বিশেষজ্ঞ।

ভাইরোলজিস্ট ডা. স্টিফেন গ্রিফিন বলেছেন, এ বছর মহামারি পরিস্থিতি কেমন হবে তা নির্ভর করছে টিকার সরবরাহ, বণ্টন ও কোন টিকা অনুমোদন পায় তার ওপর। আমরা যদি আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যাকে রক্ষা করতে পারি তাহলে মৃতের সংখ্যা কমে আসবে। কিন্তু বাকিদেরও টিকা দিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি করোনার ব্যাপারেও ভাবতে হবে আমাদের।

স্টিফেন গ্রিফিন ইউনিভার্সিটি অব লিডসের স্কুল অব মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি আরও বলেন, আমি বলব, ৬৫ বছরের কম বয়সীদের টিকা দেয়ায় আরও অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। ব্যাপারটা এমন না যে, শুধু বয়স্কদের টিকা দিলেই ভাইরাসটি চলে যাবে। তাছাড়া সবচেয়ে বড় প্রশ্নগুলোতো আছেই- টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা কতদিন টিকবে? টিকাগুলো সংক্রমণ বন্ধে সক্ষম কিনা ইত্যাদি।

তিনি বলেন, টিকা দেয়ার পরও যদি আমাদের অজান্তে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে তাহলে সেটাও একটা সমস্যা। আমরা এখনও উপসর্গহীন সংক্রমণ পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি। এ সংক্রমণ বুঝে উঠা সব টিকার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপর নির্ভর করে টিকার ব্যবহার নির্ধারণ করা হবে।

সাইকোলজিস্ট স্টিফেন রেইচার বলেছেন, ২০৮০ বছর আগেই গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রকৃতির সঙ্গে মিলে বাস করার বদলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আমরা শেষ হয়ে যাব। গেল বছর তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ছোটবেলায় আমি গ্রীষ্মের প্রথম স্ট্রবেরির জন্য অপেক্ষা করতাম। খাবার তখন মৌসুমি ছিল। কিন্তু এখন আমরা ভাবি যে, মৌসুমগুলোকে অগ্রাহ্য করতে পারব। আর এটা এক ধরনের ইঙ্গিত যে, আমরা এখন মৌসুমকে অস্বস্তিদায়ক ভেবে অগ্রাহ্য করি। প্রভাব খাটাই। এর জন্য মূল্য দিতে হয়। স্টিফেন রেইচার ব্রিটিশ ও স্কটিশ সরকারের করোনাবিষয়ক উপদেষ্টা এবং ইউনিভার্সিটি অব সেইন্ট অ্যান্ড্রিওসর সাইকোলজির অধ্যাপক। তিনি আরও বলেন, আমরা এখন আবিষ্কার করছি যে, প্রকৃতিকে অগ্রাহ্য করার পরিণাম হচ্ছে করোনার মতো বিশাল মূল্য পরিশোধ করা। চীনের ওই প্রাণী বেচাকেনার বাজারগুলোয় যেখান থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হয়- মানুষের পাশাপাশিই বাস করে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। ভাইরাসগুলোর জন্য এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে স্থানান্তরের আদর্শ পরিবেশ এটি।

লন্ডনের মিউজ রেস্তোরাঁর মালিক ও প্রধান শেফ টম আইকেন্স। তিনি আবুধাবির বিভিন্ন রেস্তোরাঁরও প্রধান শেফ এবং গ্রেট ব্রিটিশ মেনুর বিচারক। তিনি বলেন, করোনা মহামারি ও ব্রেক্সিটের কারণে ২০২০-এর তুলনায় আতিথেয়তা শিল্পের পরিস্থিতি ২০২১ সালে আরও অনেক বেশি খারাপ হতে পারে। টম আরও বলেন, আমরা একজন আতিথেয়তাবিষয়ক মন্ত্রী নির্বাচনের আহ্বান জানাচ্ছি। গেল বছর আমাদের দেখিয়েছে যে, পার্লামেন্টে আমাদের এমন একজনকে দরকার যিনি আমাদের শিল্পের প্রয়োজনগুলো প্রকৃত অর্থে বোঝেন। তিনি বলেন, মহামারি শেষ হতে অনেক দেরি আছে। বিধিনিষেধ শিথিলের আগে ২ কোটি মানুষকে টিকা দিতে চায় সরকার। তাতে ইস্টার (৪ এপ্রিল) পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। আমি আমার টিমকে বলেছিলাম যে, জানুয়ারিতে আমাদের ব্যবসা খোলার সুযোগ নেই, হয়তো ফেব্রুয়ারিতে খোলা যেতে পারে। কিন্তু এরপরই লন্ডনে চতুর্থ মাত্রার নিষেধাজ্ঞা জারি হলো। তাই মার্চ বা এপ্রিলের আগে ব্যবসা চালুর সুযোগ নেই।

যুক্তরাজ্যের সাবেক কোষাধ্যক্ষ বিষয়ক অর্থনীতিবিদ মার্টিন বেক বলেছেন, আমি মনে করি, সফলভাবে টিকা দেওয়া হলে এ বছর অনেকটা ইতিবাচক হবে। ২০০৮, আশির দশক ও নব্বইয়ের দশকের আর্থিক মন্দার সময়ে সৃষ্ট সমস্যাগুলো দূর হতে অনেক সময় লেগেছিল। কিন্তু এবার অর্থনীতির মৌলিক কোনো বিষয়ে সমস্যা নেই, এমন কোনো ভারসাম্যহীনতা নেই যেটি সামলাতে হবে। অর্থ ব্যয় কমায় ও কাজ থেকে দীর্ঘ ছুটি পাওয়ায় মানুষের গৃহস্থালি সঞ্চয় বেড়েছে। ব্যাংকে অঢেল অর্থ পড়ে আছে। এ অর্থ ভোক্তা খাতের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পূর্বের অর্থনৈতিক মন্দাগুলোর সময় ব্যাপক পরিমাণের ঋণ ছিল। কিন্তু এবার সুদের পরিমাণ কমই থেকেছে, ভোক্তা ক্রেডিট ঋণাত্মক রয়েছে, মানুষজন ক্রেডিট কার্ডের ঋণ শোধ করছে- অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা রয়েছে।

ফেসবুক থেকে মন্তব্য করুন

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা